১ম বর্ষ,৫ম সংখ্যা,১৫ ই জুন ,২০১৪। ১লা আষাঢ়,১৪২১

১ম বর্ষ,৫ম সংখ্যা,১৫ ই জুন ,২০১৪। ১লা আষাঢ়,১৪২১

Wednesday, January 1, 2014

কান্নাবিলাস

এস,আহমেদ,ভোর

নানাবিধ সংকট;উত্তরণের পথ বাতলে দিচ্ছে সবাই
আমি কেবল ভেবেই যাচ্ছি,অযাচিত সব ভাবনা-
কেউবা সুযোগ বুঝে শুনিয়ে দিচ্ছে নানান উপদেশ,
জীবনমুখী শ্লোগানে ভরে উঠেছে জীবন,কাটেনি সংকট!

আমার অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যৎ মিলেছে একই মোহনায়-
যে মোহনার পানি কেবল শুধুই চোখের নোনাজল,
ব্যর্থতার চাদরে ঘেরা,অব্যক্ত আশার জীবন;নামেই জীবন-
তাতে দেখা মেলে না উদ্ভাসিত আলোকের পথ!

শুরু আর শেষের মাঝের বিন্দুভুল সিন্ধুর মনে হয়,
পাওয়ার আকুলতায় না পাওয়াটা যে চরম বঞ্চনা;
আমি বঞ্চিত সেই সব মানুষের দলে যারা-
জীবনকে করেছে রঙিন,নিজে পায়নি বর্ণিল ছোঁয়া!

আমি মিশে গিয়েছি,সেই সব অভাগাদের সাথে-
যারা জীবনের আতিশয্যে ভুলে গিয়েছে শৈশব;
ফিরে তাকাতে গিয়ে আমি,দেখেছি কেবলই দুরাশা-
হারানোর তালিকায় যোগ হয়েছে একের পর এক সপ্ন!

সাতকুল ভেবে আমি নোঙর ভিড়িয়েছি অদৃষ্টের পানে-
জীবনের গ্লানি তাতে বেড়েছে বৈকি একটুও কমেনি,
যা জেনেছিলাম তা নিরূপণের সময় হয়ে উঠেনি-
দীর্ঘশ্বাস কেবল বাড়িয়েছে জীবনের চরম দুর্দশা!

গৃহতর মন সাফল্যের আশায়,চেয়ে থাকে প্রতিক্ষণ-
বাধ সাধে কেবল অদৃষ্ট নামের এক ভাগ্য-লিখন;
অযথাই কেবল বকে যাই,সুন্দরতম কিছুক্ষণ-
মনের পায়ে শিকল গড়িয়ে সখ্য গড়ি সপ্নের দ্বোর!

ক্লান্ত বায়ু মরীচিকা খুঁজে ফিরে জীবনের প্রাপ্তি-
আমার কলকাঠি গুলো তাদের সাথে রয়েছে ব্যাপ্তি,
শূন্য হাড়ি আর মরুর বুকে পিষ্টে যাওয়া সুখকুমারি-
জীবনকে সেলাম জানিয়ে চলছে অবিরত ঘরছাড়ি!

আমি কেবল পুরনো তানপুরার ন্যায় রয়েছি একেলা-
এখন আর খোঁজ হয়না,বাতি জ্বলেছে কি সন্ধ্যাবেলা?
কেবল এটুকু বলা হয়,তোমরা নতুন খোঁজ করো-
পুরাতনে করনা ভরসা,ফেলে রেখে দাও তারে!

আমি ঝঞ্ঝাট আর আশংকা বিলাস,খোঁজা বড় দায়-
একেই করেছি লালন,ছুটে চলেছি আদি-অন্তহীন;
সীমানা প্রাচীর বাধা তাই,দেয়াল টপকাতে পারিনি-
জীবনের পথচলায় যোগ হয়নি নতুন কোন কাহিনী!

আমি কল্পনাবিলাস এক বিকল মানব,খুঁজি অন্তহীন-
আশাগুলো বাঁচিয়ে রাখতে উপায় খুঁজি প্রতিটি দিন;
দোলনচাঁপা হতে গিয়ে হয়েছি আজ কান্নাবিলাস-
সুখের আশায় ছুটতে গিয়ে ছেড়েছি কেবল দীর্ঘশ্বাস!

আমি প্রাচীরভেদী এক মানব,যার নেই কোন কায়া-
ঊর্ধ্বপানে চেয়ে থেকে একে একে ছেড়েছি সব মায়া;
আমি দ্যুলোকে ভাসিনা,ভ্যুলোকে ডুবিনা তবুও অপয়া-
জীবন সায়াহ্নে রাখা আছে হয়তো আধারের কায়া!

আমি নোঙর ফেলি না মানবীর মায়ার সাগরে-
ভয় পাইনা চিরভয়ংকর কোন বিষের তরে;
আবেগের বাড়াবাড়িতে আমি খেই হারাই না-
ছুটে চলি না আশাজাগানিকা কোন দোলাচলে!

আমি নিরঙ্কুশ এক বিজয়ী,মানদণ্ড কেবলই আমি-
হাসি-কান্নাতে কোন তফাৎ নেই জানে শুধু অন্তর্যামী;
বিজয়ী তপস্বিনীর হাতে আছে মরন এটাও যে জানি-
আলোকের তরে অন্ধকারকে ধর্ষণ করতে দিব সম্ভ্রমহানি!

মনের সীমানাকে পদাঘাতে ভেঙে করেছি বিচূর্ণ-চুরমার-
নিজের ঘর ভেঙে গড়েছি হাজার ঘর,হয়েছে আকাশভার;
সন্ধ্যাতারায় মুখ লুকিয়ে খুঁজেছি কেবল সম্ভাবনার দ্বার-
ভাবিনি কখনো জীবনের তাতে হয়েছে কতটা জয় কিবা হার!

আমি কেবলই তার,শুধু তার,নাও মোর জীবনের ভার-
হৃদয়চুমে মিটিয়ে দাও চিরজীবনের ধরিত্রীর আধার;
সপ্নবিনোদিনীর মত জ্বালাও আমায়,সিক্ত করো মোরে-
আলো আধারের দূরত্ব ভুলে নাওনা তুমি আপন করে!

আমি পিপাসিত মরুর বুকে চলা উটের ন্যায়-
ভুমিষ্ট হওয়া শিশুর মত সিক্ত করো আমায়;
আলোকের ভুবনে বেশি করে তপনজ্যোতি ছড়াও
আজ,আগামীর সম্ভাবনায় আমায়,একটু ঠাই দাও!

আমি প্রেম পূজারি,শেষের কবিতার লাইন
রোপণ করেছি সুখের সপ্ন,ভালবাসার পাইন;
মন বসন্তের ফোঁটা ফুল অভ্যর্থনা জানাবে আমায়-
সাফল্যের ডালাখানি তোমার পানে হাত বাড়ায়!

আমি শিল্পীর শেষ তুলির আঁচরের একটুখানি ছোঁয়া-
ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ানো ইটের ভাঁটার কালো ধোঁয়া;
গ্রাম্য বধূর শাড়ীর আঁচলা জলে সিক্ত কর মোরে-
দুর্বার গতিতে আমায় নিয়ে চল তোমার সঙ্গী করে!

আমি তুচ্ছ,অবলীলাক্রুমে ভেঙে ফেলা বালুর তৈরি ঘর-
অতি সংকটময় আলাপনে দুঃখগুলো করেছে যে ভর;
সুদূর ভাবিনা,অদুর চাইনা,শুনি শুধু হাহাকারের ধ্বনি-
ক্রুমে ক্রুমে শেষ হচ্ছে,জীবনের স্বপ্নমাখা দিনগুলি!

আমি বৈষম্যের এক জলন্ত প্রতিচ্ছবি তাই প্রতিনিয়ত জ্বলি-
ক্ষুদ্রকায় দুঃখগুলো আপনাতেই সব কেমনে যেন ভুলি;
অনুভবেতে হার কাঁপানো শীতের ন্যায় অবিরত কাঁপি-
অনাচার গ্রাস করেছে আমার সামগ্রিক জীবন ব্যাপি!

আমি রৌদ্র ছায়া,রৌদ্র কায়া,তপ্ত বালুর কনা-
সুখ গুলো মোর হয়না যে আর নতুন করে বুনা;
নিরাশার সাঁজা স্বপ্ন খোঁজা,চোখ বুজা কল্পনা-
হায়েনারা কেন বারবার দেয়,আমার দেশে হানা!

আমি উদ্ভাসিত আলোক পানে চলছি ক্ষণে ক্ষণে-
নীহারিকা পুঞ্জের পিয়াসী এ মন নিশ্চয় তা জানে;
তিমির ভেদে গড়েছি এক ভালবাসার মায়াপুরি-
মায়ার জীবন পাহারা ভেদে সীমানা যাবো ছাড়ি!

আমি কখনো ভাসি,কখনো বা ডুবি,পাইনা কোন ভয়-
জানি একদিন হবেই হবে শোষিত বঞ্চিতের চূড়ান্ত বিজয়;
অনাচার,অনীহা,অনাদর তথা অনাহীন থাকবে জগৎময়-
আশা,স্বপ্ন,প্রতিক্ষা যাই বলিনা কেন হবে যে মোদের জয়!

আমি দুরবিত্তের মাঝেও বুপন করবো আশার বীজ-
মানুষ পারে না নেই যে কিছু,ভাবতে হবে নিজ নিজ;
আজকের পিয়াস কালকের আশ্ব গড়বে নিবাস-
গোলাপ কলি নয় গড়বে শুধু ভালোবাসার চাষ!

আমি রাখালিয়ার বাঁশি,নজরুলের অগ্নিবীণার সুর-
দূর কেবলি দূর,স্বপ্নলোকের মাঝে কেন সুরাসুর;
অর্বাচীন বানীর তরে খুঁজে চলি ময়ূরাক্ষীর তীর-
আজও তাই রবীন্দ্রের শান্তিনিকেতনে এত বেশি ভিড়!

আমি চিরসবুজ,জীবনানন্দের কবিতার প্রতিচ্ছবি-
স্বপ্ন মায়াজালে হারিয়ে যাওয়া বঞ্চিত এক কবি;
জীবন ছবি,আপন রবি,মনে আছে মোর সবি-
আপন ক্ষণকে আপনার করে গেছে যে রবি!

আমি সুকান্তের গদ্যময় কবিতার ঝলসানো সে রুটি-
জানিনা কখন ফটিকের ন্যায় জীবন থেকে নেব ছুটি;
প্রবহমান জীবনের হাজার বছরের যে প্রতিচ্ছবি-
কতটা আর কলম দিয়ে ধরে রাখবে মোর কবি!

আমি বয়ে চলা নদীর পাল তোলা এক,ছই বিহীন নৌকা-
শ্রমিকের ঘামে সিক্ত হওয়া পিচঢালা পথের মানব চাকা;
জীবনটা যে সত্যি বড়,নদীর মত খুবই আঁকাবাঁকা-
দুর্ভাবনার প্রতিটাক্ষণ থাকে শুধু কালো মেঘে ঢাকা!

আমি হলাম তাই প্রতিনিয়ত যা ভেবে ভেবে যাই-
মুক্তমনে এখনো যে স্বাধীনতা খুঁজে বেড়াই;
জোর গলায় সেই পুরনো দাবিটা,আবারো জানাই-
মুক্তি চাই,মুক্তি চাই,মুক্তি চাই।।।

ভোর
হাতির ঝিল,ঢাকা
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩
রাতঃ ৩ টা