১ম বর্ষ,৫ম সংখ্যা,১৫ ই জুন ,২০১৪। ১লা আষাঢ়,১৪২১

১ম বর্ষ,৫ম সংখ্যা,১৫ ই জুন ,২০১৪। ১লা আষাঢ়,১৪২১

Thursday, February 13, 2014

আলফাত্তাহ ফাহাদ এর কিছু কবিতা

'প্রেম'
-আলফাত্তাহ ফাহাদ

প্রেম আসে বারেবার নয় একবার,
প্রেমের কি শেষ আছে আদৌ বলিবার?
প্রেমহীন শূণ্য হৃদয় আছে ক'জনার?
মনের প্রেম সেতো নয় মুছিবার ।

প্রেম এসেছিল আসবে শতবার ,
সুখের তরীতে অথবা দুখের ভেলায়।
নবজাগরণের প্রেমিক হয়ে দেখা দিবে রোজ,
প্রেমের কি শেষ আছে, শেষ কি হবে প্রেম ভোজ?

শত প্রেমিকার রুপলীলায় প্রেমিকের হা-হুতাশ,
লাগিছে দুয়ারে প্রেম-বিলাসীর দমকা বাতাস।
ডেকেছে প্রেমিক প্রেমপুঁজারীর সভা,
প্রেমাসক্তির প্রেমভোজন হবে দফা।

প্রেম কাননে ফুঁটিছে ফুল সদাই ,
সুবাস ছড়ায়ে সুবাসিত করিবার তাড়নায় ।
নাই, শেষ নাই প্রেম তরীর চলিবার,
প্রেম এসেছিল আসিবে বারেবার ... ।



'আমারও আছে জল'
- আলফাত্তাহ ফাহাদ

কি করে বোঝাই তোমায়?
প্রতিটি সেকেন্ডের এই চলমান আস-ফাস আর রচিত ইতিহাস,
হৃদয়ের স্পন্দনে লিপিবদ্ধ হয়েছে যা বিশাল এই কালের বক্ষে;
একাল-সেকাল দু'কাল মিলিয়েই জমা পড়ে আছে অজস্র গল্প,
সে গল্পের মায়াবী জগতে আটকা পড়েছি দিনে দিনে।

একটু সময় করে দেখে যেও তুমি আমার এই সর্বনাশা সকাল-দুপুর-রাত,
যেখানে আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন তোমাতেই বসবাস;
রয়েছে বিধাতার অট্টহাসি আর অনাকাঙ্খিত ঝড়ের পূর্বাভাস,
স্বপ্নটাকে হারিয়ে খুঁজে ফেরা আর অনেকটা দীর্ঘশ্বাস।

জানি আমার কাঁন্নার জল  তুমি দেখতে পাবে না কোনদিন,
কারণ সেটাকে এখন আর জল বলা যাবে না;
কাঠপোড়া রোদ্দুর আর জমে থাকা কয়লার তপ্ততায় শুঁকিয়ে গিয়েছে সবটুকুই,
তাই আর বলব না আমি কাঁদি, আমি কাঁদছি, আমারও আছে জল ...


'দুপুর'
- আলফাত্তাহ ফাহাদ

তুমি কি দেখেছো,
নির্জন দুপুরের নিঝুম অরণ্যের ছায়া,
পুকুরঘাটের রৌদ্র-ছায়ার চিরায়িত খেলা,
জল-তরঙ্গের প্রতি ভাজের শৈল্পিকতা,
আর আমার দুপুরের আমিত্বটাকে ?

আমি আমার দুপুরের কাছে যাই,
একখানি নকশী করা স্বপ্ন বুনোতে,
বনফুলের অনাকাঙ্খিত ঘ্রাণ নিতে,
আর তপস্যার ঘোর কাটানো স্নানে,
এইতো আমি আমার দুপুরে !

দুপুরের তপ্ততা বড়ই মলিন আমার কাছে ,
আমি খুঁজে নিয়েছি তার শুভ্রতাটুকুই।
আর তাই উদাস দুপুরে আমি উদাসীন,
তিক্ততা ঝেড়ে ফেলে ডুব দিয়েছি দুপুর শিল্পকলায়!

বর্ষণের দুপুরে আমি চেয়ে থাকি অপলক,
ঝুম বর্ষা স্নানে প্রাণ জুড়ানোর সুপ্ত বাসনায়।
আমার দুপুরে আমি খুঁজে ফিরি,
কদম ফুলের বিকশিত মাধুর্য্যে বর্ষণের কোমল স্পর্শ ।

আমি আমার দুপুরের মায়ায় জর্জড়িত !
আগলে রেখেছি আমি আমার দুপুরকে,
তুমি কি দেখনি,
আমার দুপুরের আমিত্বটাকে?
যেখানে রয়েছে আমার দুপুর সম্রাজ্য!
আর প্রজাহীন এক রাজা এই আমি।


'পোঁকা'
- আলফাত্তাহ ফাহাদ

এতদিনের ইতিহাসে তোমাকে পায়নি খুঁজে,
যখন পেলাম তখন বড় দেরী হয়ে গিয়েছে,
কোথা থেকে এলে হঠাত এই অসময়ের তলানিতে?
অতপর একটি পোঁকা হয়েই আমার কানে প্রবেশ করেছো,
তারপর চলে গিয়েছো একদম ভেতরে,
কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছো আমার সবটুকুই,
আমি বাঁধা দিইনি একটুও,
সে সাহসটুকু আমার ছিল না যে!
এখন কিছুটা উচ্ছিষ্টও অবশিষ্ট নেই আর সেখানটিতে...

তারপর কেঁটে গিয়েছে আরও অনেকটা সময়,
দিবা-নিশির ভাজে গভীর মায়া আর যতনে,
কেটে গিয়েছে বহু আলাপনের সুখানুভুতি,
দরদিয়ার মায়াবী টানের মোহে, গিয়েছিলাম অনেকটা দুর।
তখনও বুঝিনি কষ্টের পাহাড়টা আমারই বুকের উপর এসে পড়বে,
আমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সহস্র বছরের দু:খরাশি আপন করে নেবে বলে...
অবশেষে আমার ছাঁয়াটুকু মুছে দেয়ার ক্ষণ এলো বলে,
পাতালপুরীর মিশে যাওয়া জগতেই যেতে হবে আমায়...

তুমি কি আদৌ আপন করে নিয়েছিলে আমায়?
তোমার বুকের কোন ভাঁজেই কি আমার নামটি লিখা ছিল না?
তুমিতো অসংখ্য কাঁমড় বসিয়েছিলে এ বুকে,
আমিতো মাতালের মত সেটাকেই সুখ ভেবেছিলাম,
তুমি কি কোনদিনও জানতে পারবে এই বুকের ক্ষতটার কথা?
জানি পারবে না, তুমি আমাকে শেষ করে দিয়েছো আমি তাতে কাঁদছি না,
আমার কাঁন্নার কারণ আমি নিজেই!

আজ আমিও একটা পোঁকা হয়ে গিয়েছি,
তবে এ পোঁকাটির আজ আর কোন মুল্যই নেই কারও কাছে,
নষ্ট হয়ে যাওয়া কোন কীটের ন্যায় তার বিনাশ দেখার অপেক্ষায় সবাই এখন,
আমি তাদের হতাশ করবো না এমনকি তোমাকেও...
পোঁকাদের রাজ্য থেকে আজ আরও একটি পোঁকার পতন হতে যাচ্ছে,
তবে তুমি জানবেও না পোঁকাটার বুকে এখনও কত ভালবাসা জমা আছে,
জানবে না পোঁকাটা যাবার বেলায় কতটা বোবা কাঁন্নার জল নয় রক্ত ঝরিয়েছে ...



একটু দাড়াবে কি?
- আলফাত্তাহ ফাহাদ

একটু দাড়াবে কি ?
সুখের পরশমাখা এক ঘটি জল নিয়ে,
কোন মোহ ছাড়াই একখানি বিমুগ্ধ প্রতিদানের আশায় ,
আমার জন্য, শুধুই আমার জন্য থাকবে অপেক্ষায়,
করবে কি রাত্রি যাপন নির্ঘুম ঐ দু'চোখে,
জোস্না রাতে নুপুরের ঝড়-তোলা সুরে কি ডাকবে তুমি আমায় ?

একটু দাড়াবে কি?
একখানি স্বপ্ন ছোঁয়ার ইচ্ছে নিয়ে,
অবাক চোখে চেয়ে থাকা স্বপ্নবাজের কাছে,
দেবে কি কিছু স্বপ্ন উপহার আমায় ?
স্বপ্নের মায়ায় যতনে জড়িয়ে রেখে,
স্বপ্নচূড়ার স্বপ্নকে খুজে নেবে আমার মাঝে ...

একটু দাড়াবে কি ?
ধরবে কি হাত আমার ,
দেবে কি তোমার ভেঁজা অধরের মিষ্টি হাসি ,
কিছু কথা কি কইবে সখী মোর সনে,
কবিতার ছন্দ মার খাবে যে কথায়,
গাইবে কি একখানি গান আমায় নিয়ে?
হোক না বেসুরো অযথাই ...

একটু দাড়াবে কি?
শুনবে কি আমার মনের ব্যথা ,
নিভিয়ে দেবে জ্বালাময় তপ্ত অগ্নিশিখা ?
ভালবাসার বর্ষণের ঢলে ভিজবে মোর সাথে,
দেখবে কি নগ্ন পায়ে শিশিরভেজা ঘাসের মিলন,
আর, মুছে দেবে নীল রঙ্গা দু:খটাকে ?

একটু দাড়াবে কি?
দাড়াও না একটু ,
শোনই না আমার কথা ,
বাসো না একটু ভাল অযথাই,
ছড়িয়ে দাও ভালবাসার রংধনু আকাশের ঐ  নীলিমায়।


মাসুম বিল্লাহ এর কবিতা

       আধুনিকতা
আধুনিক শহরের আধুনিক মানুষ আমরা
কত শত আধুনিকতার মাঝে বেড়ে উঠছি আমরা
ধন্যবাদ তোমায়, এই আধুনিকতা
ধন্যবাদ তোমায়, এই শহরকে।
এখানে বেড়ে উঠছি আমরা উন্নত জীবন দেখে
বেড়ে উঠছি শত মানুষের কোলাহল দেখে
শত মানুষের ব্যস্ততা দেখে
ধন্যবাদ তোমায়, এই আধুনিকতা।
এই আধুনিকতার মাঝে অনেক অনেক কিছু পেয়েছি
ধন্যবাদ তোমায়।
এখানে দেখতে পাই কত শত মানুষ হয়ে যাচ্ছে বিত্তশালী
রাত ভোর হলেই।
দেখতে পাচ্ছি এখানে কত শত মানুষ হয়ে যাচ্ছে
পৃথিবীর একজন,
মিশুক মুনির, তারেক মাসুদ আরো কতশত
অমর মানব তুমি দিয়েছো
আজ তারা নেই তবুও আজও তাদের দেখতে পাই।
ধন্যবাদ এই শহর তোমাকে
এই শহর, এই আধুনিকতা
এখানে তুমি দিয়েছো অনেক মহান পুরুষ
যাদের একটু মানবতার ছোঁয়ায়,
হাজার হাজার বিপন্ন জীবন বেঁছে যায়।
আমি দেখতে পাই এই শহরে
আজস্র ভালোবাসা, আজস্র আত্মত্যাগ, আজস্র উৎসর্গ
হয়তো তাদের
অনেক ভালোবাসা, আত্মত্যাগ আর উৎসর্গ
আমরা দেখতেও পাই না, জানতেও পারি না।
কিন্তু এখনও যে এখানে অজস্র মানুষ রয়েছে----
যারা বেঁছে আছে বিপন্ন ভাবে,
এখনও কি আমাদের সময় হয়নি তাদের পাশে দাঁড়ানোর।
এখনও তো এই আধুনিক শহরে দেখতে পাই
অন্ধকার রাত, কালো ছোঁবোল, অসহায় মানবতা।
যারা আজও শুধু সংগ্রাম করছে বেঁছে থাকার জন্য।

এখনও তো দেখতে পাই এই শহরে
অসংখ্য মানুষ, যারা পায়নি কোন অধিকার
এখনও শুনতে পাই তাদের কান্না।।
এই শহর, এই আধুনিকতা
তুমি কি পারনা দিতে তাদের আধুনিকতা।
এখনও তো দেখতে পাই মানুষের নির্মমতা,
এখনও তো এখানে দেখতে পাই অমানুষের বর্বর পদচিহ্ন
যা কুলুষিত করে এই শহরকে
যা কুলুষিত করে এই আধুনিকতাকে
যা কুলুষিত করে এই জাতিকে।।

খোলা কলাম /তমসা অরণ্য

সমরেশ বসুর প্রজাপতি ও কিছু কথা
--- তমসা অরণ্য
প্রাণের মেলা বইমেলা-২০১০ এ সময় দিতে না পারার ও মন মত বই কিনতে না পারার দুঃখ ঘোচাতে বইমেলা-২০১১ থেকে বেশ কিছু বই কিনেছিলাম। আজ আবার বইমেলা-২০১৪ শুরু হওয়ায় ২০১২ বা ২০১৩-এর বইমেলা নয়, ২০১১-এর কথা মনে পড়ল। ফেরার পথে পা টেনে টেনে চলতে হচ্ছিল, তবু আনন্দে বুক ভরে যাচ্ছিল আমার। ২০১১-এর এপ্রিলে এসে সেই গত দুমাস আগে কেনা বইগুলো পড়ার ফুসরত মিলছিল না। হঠাৎই হাতে যা সময় পাচ্ছিলাম, তাই নিয়ে ঝুলে পরেছিলাম বইগুলো পড়ব বলে। শুরু করেছিলাম তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনী নেই, কিছু নেই দিয়ে, কিন্তু তার পাশাপাশি হাতে তুলে নিয়েছিলাম আরও একটি বই; নাম তার প্রজাপতি, লেখক সমরেশ বসু। প্রচ্ছদে আঁকা একটি পেরেকবিদ্ধ প্রজাপতি! বুঝলাম, রোমান্টিক বা সুখপাঠ্য কোন উপন্যাস নয় এটা। বলতে দ্বিধা নেই, কলকাতার দুচার জন লেখকের লেখার প্রতি আমার এক ধরণের ভাল লাগা কাজ করতশীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁদের অগ্রভাগে। তবে সমরেশ বসুর আর কোন উপন্যাসটি বিগত সময়ে পড়েছি, ঠিক মনে করতে পারছিলাম না; এখনও পারছি না। তবে এটা পড়ে কি এক বোধ যেন কাজ করেছে, কি যে বোধ বুঝতে পারিনি সেদিনও; আজো পারছি না। অনেকটা এ উপন্যাসের নায়ক চরিত্র সুখেন্দু যেমন নায়িকা শিখার মধ্যে কি যেন কি আছে টাইপ কিছু একটা খুঁজে ফেরে তার মত! সুখেন; সরকারি আমলা পিতার বখে যাওয়া কনিষ্ঠতম সন্তান। বড় দুই দাদার মত কলেজ জীবনেই রাজনীতির স্বার্থবাদী পাঠ শিখে কর্মজীবনে চাকরি-ব্যবসার পাশাপাশি বাঘা বাঘা দুই পার্টির হর্তা-কর্তা হয়ে এলাকা ভাগাভাগি করে গরিবের নাকের ডগায় মূলো ঝুলিয়ে তথাকথিত জনদরদী নেতা হয়ে উঠতে পারেনি। কলেজ টু আউট অফ কলেজ জীবনে চারপাশের মানুষের কারণে হয়ে উঠেছে সুখেন গুন্ডা! দেখা হলে সকলে ভাল-মন্দ জিজ্ঞেস করে, পাড়ার বৌদিদের কাছে-পিঠে তার ডাক পড়ে, সরকারি বাবু থেকে পেটমোটা কারবারি; এমনকি দারোগা বাবু পর্যন্ত তাঁকে সমীহ করে চলে। এ কোন ভালবাসা নয়; ভয়। কারণ সবার ঘরের খবর, ঘট আর ঘটির খবর সবটাই যে তাঁর জানা! কাহিনীর শুরু একটা প্রজাপতিকে ধরা নিয়ে সুখেনের একরোখা চেষ্টা আর শিখার তা রুখে দেয়ার প্রাণপন চেষ্টা থেকে। মাঝে সুখেনের পরিবার, শিখার পরিবার, কলেজ জীবনের দাঙ্গাবাজী-হাঙ্গার স্ট্রাইকের স্মৃতিকথা, তাঁদের পাড়ার কিছু ভদ্রবেশী মানুষের সুকীর্তির(!) কথা, সুখেনের নারীজনিত নানা অভিজ্ঞতা, দাদাদের নোংরামী-দলাদলি ইত্যাদি ইত্যাদির পাশাপাশি শিখার প্রতি অজানা-অনাবিষ্কৃত আকর্ষণ বোধ (সুখেনের ভাষায় যা ওর মধ্যে কি যেন একটা আছে) গুন্ডামী জীবনের অন্যতম চ্যালা শিবের বোন মঞ্জরীর সাথে সুখেনের দেহজ সম্পর্ক আছে। এমনকি এ ধরনের মুহূর্তকালের বহু সম্পর্ক গড়েছে-ভেঙ্গেছে তাঁর জীবনে ভদ্দরলোক বলে খ্যাত বহু বাবুদের স্ত্রী, মেয়েদের সঙ্গে কিন্তু কোনোটিই যেন শিখার প্রতি যে নেশা তার মত নয়। শিখার নাড়ী-নক্ষত্র জানা থাকলেও, প্রতিনিয়ত কি যেন একটা অজানা কিছু খুঁজে পেতে চায় সুখেন। এই শিখার জন্যেই একসময় সাধারণ ছেলেটি হবার আকাঙ্খা পেয়ে বসে তাঁকে। স্কুল জীবনের নিরীহ শিক্ষক নিরাপদবাবুর মত নির্বিঘ্ন জীবনে ফিরে যেতে চায়। চোপড়া সাহেবের কাছে চাকরির কথা বলায় নিজেই অবাক হয়! কিন্তু সমাজ, সংসার, মানুষ তাঁকে তা হতে দিল কই? দাদাদের দলাদলি আর শত্রুপক্ষের নির্মম বলী হয় সুখেন। হরতাল চলাকালীন সময়ে পক্ষ আর বিপক্ষদলের যুগপৎ ছুটে আসা মিছিলের মুখে পরে এক দোকানে আশ্রয় নেয়া অবস্থায় দাঙ্গার মাঝে উড়ে আসা এক সর্বনেশে বোমার আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সুখেনের সাধারণ কেউ হবার স্বপ্ন। হারাতে হয় চোখের আলো, পা আর হাত। এ উপন্যাসের কোন চরিত্রই অলৌকিক বা অতিলৌকিক নয়; সবাই বাস্তব জীবনের প্রতিনিধিত্ব করেছে। সুখেন যেন রাস্তার সেই চিরচেনা গুন্ডা ছেলেটি; মুখে যার অশ্রাব্য খিস্তি-খেউর, চোখে রঙ্গিন মদের নেশা আর মনে আপাত অশ্লীল সব ভাবনার বাসা! তবু সেই গুন্ডা হয়েও যেন এই গুন্ডা নয় সুখেন, এই নয়টুকুর হয় না হওয়াটাই আমাদেরকে ভাবায়। শেষ পরিণতি ভেতরটা দুদ্দাড় করে কাঁপিয়ে দেয়। ঘৃণা কিংবা করুণা হয় না সুখেনদের প্রতি; হয় সমাজ আর তথাকথিত সমাজপতিদের প্রতি। একসময় বইটা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ভারতে। অশ্লীলতার দায়ে আদালতে চলেছিল মামলা। অভিযোগকারীর দাবি ছিল, তরুন সমাজকে বিপন্ন আর বিপথে চালিত করতে পারে এ উপন্যাস। উপন্যাসটি আদ্যোপান্ত পড়ে, হাস্যকর মনে হয়েছে সেই অভিযোগ! সাহিত্যে অশ্লীলতা আর জীবনে বাস্তবতা এ দুটি বিষয় অনুধাবনে পাঠককে অনেক দায়িত্বশীল হতে হয়। সত্য অনেক সময়ই নির্মম হয়; তা বলে.. মানব না? ছি ছি আর থু থুক্কারে অস্বীকার করে যাব! যে বয়সের পাঠক এই বইটি পড়ার আগ্রহবোধ করবে, তাঁকে কিছুটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে তবেই পড়তে হবে। কারণ, গতানুগতিক রক্ষণশীল সমাজমানস নয়; বরং এর সঠিক তাৎপর্য অনুধাবনে চাই তথাকথিত সমাজ নিরপেক্ষ প্রগতিশীল মন। আশা করি, যাপিত জীবনে অতি প্রচলিত দুএকটা কিংবা হোক না তা চল্লিশ-পঞ্চাশেক আপত্তিকর কথা; তা জীবনবাদী সাহিত্য পাঠে অভস্ত্য পাঠকদের শরীরে অথবা মনে এই বয়সে এসে সস্তা সুড়সুড়ি উদ্দীপক কোন অনুভূতির উদ্রেক করবে না। যাহোক, আমার বলার অনেক কিছুই আছে; ছিল। কিন্তু অন্ধের হাতি দর্শনের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আমার বন্ধুরা ভুলে যাননি! আর তাই অনেক কথা অনুক্ত রেখেই বলব -- ঝালের মজা যদি বুঝতেই হয়, তবে অন্যের জিভে না চেখে.. নিজের জিভেই চাখুন। উহা কত প্রকার ও কি কি, হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে যাবেন। আমি যতটুকু বললাম, তার অনেকটা জুড়েই যেন.. সুখেন আর শিখার প্রেম! অথচ, উপন্যাসটি মোটেও গতানুগতিক কোন প্রেমের কাহিনীনির্ভর উপন্যাস নয়; সুন্দর কোন কিছুর উপর সহজ একটা দাগের মত এর মূল থিমটাও কেমন যেন স্বাভাবিক। আরও স্বাভাবিক নায়ক সুখেনের মুখের অশ্লীলতা দোষেদুষ্ট স্ল্যাং ভাষাও। শুলাদা নামক অপ্রধান চরিত্রটাও কেমন যেন একটা দ্যুতিময় আশ্চর্য আভার সৃষ্টি করে! শিখা ঠিক রক্ত মাংসের একজন হয়েও যেন.. আর পাঁচটা মেয়ের মত নয়; কি যেন কি রহস্য আছে ওতে। প্রজাপতির প্রসঙ্গ বারবার এসেছে; বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যজনিত কারণেই। শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতিতে রুপান্তরিত হবার মত একটা আকাঙ্খা, একটা চেষ্টা আর সুখেনের হাতে আহত সেই প্রজাপতির নিস্ফল আস্ফালনের সাথে বোমায় আহত সুখেনের বোধের সাথে সাদৃশ্য যেন তা-ই মনে করিয়ে দেয়। এলোমেলো ভঙ্গিতে ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার একটাই কারণ, পারেন তো.. বইটা পড়া থেকে বিরত থাকবেন না। ভাল লাগার গ্যারান্টি দিতে না পারলেও.. মন্দ না লাগার শত ভাগ গ্যারান্টি দেয়া বোধহয় কোকিল পুড়িয়ে গলা সুকন্ঠি করার মত অবিশ্বাস্য কিংবা দুঃসাহসী কিছু নয়!

ইউসুফ কবিয়াল এর কবিতা

শুভ্র পরী
ইউসুফ কবিয়াল

আমার হৃদয় আকাশে মেলেছে
এক স্বপ্ন ডানা,
এক শুভ্র পরী
আমার হৃদয়ের গহীন পিঞ্জরে রেখেছি,
তোমায় শুভ্র পরী।

কাঁশফুল-মেঘফুলের শুভ্রতায়
আমার শুভ্র প্রেম
আমার হৃদয়ের দেয়ালে আটকানো
শুভ্র পরীর ফ্রেম।

হৃদ বাগিচার রজনীগন্ধা-বেলী
ফুলের সুভাসে
আমার হৃদয়ের আকাশে
 শুভ্র পরী ভাসে।

দাও দাও আমার হৃদয়ে দাও
শুভ্র শুচিত প্রেম
আমার হৃদয়ের দাও
শুভ্র পরীর
হৃদ খচিত প্রেম।

ডাঃ ফরিদ - উজ - জামান খান এর কবিতা

সাদা কষ্ট
ডাঃ ফরিদ - উজ - জামান খান

যাবো আমি সেই ধল পাহাড়ে
যেখানে কষ্টের সাদা সাদা মেঘ 
এলোচুলে পা ছড়িয়ে বিনুনি কাটে!
যেখানে টুপটাপ ঝরে বৃষ্টি মুক্তো হয়ে 
কিশোরীর কপোল বেয়ে!
যেখানে পাথরের বুক চিড়ে অবাক বিস্ময়ে 
দোল খায় কষ্টের শিশু ক্যাকটাস!
যেখানে ঝরে শিউলী উড়ে বরফকুচি প্রতি 
রাতে!
যাবো আমি যাবোই!
কষ্টের শ্বেত বারতা নিয়ে
শোনাবো মিলনের কষ্ট খোর
কি করে কষ্ট পেতে পেতে, কষ্ট ভালোবেসে 
সাদা হয়ে যায় মেরুর ভল্লুক
হাটে চার পায়ে, বুকে ভর দিয়ে
চোখে মুখে 
বরফের সোনা
যাবোই আমি যাবো!
শোনাবো এক সাদা নদীর 
গল্প
দেখবো মেঘ বালিকার স্বপ্ন
মুক্তি দেবো যুগান্তরের বন্দী 
অভিশপ্ত আত্মার অসমাপ্ত কথামালা
ঢেকে দেবো শ্বেত কফিনে সময়ের অপাংক্তেয়
বর্ণমালা!
কষ্ট বিলাসী মানুষের এই রংগীন পুরীতে 
আর একবেলাও নয়!
এখানে প্রজাপতি মানুষেরা কষ্ট নিয়ে 
কাটায় নষ্ট সময়, করে খেলা! 
পিঁপড়ের বাসার মতো ক্ষনিকের কষ্ট আমার 
চাইনা! আমি চাই কষ্টের বিশাল সরোবর 
হোক আমার হৃদয়!
মানুষেরা দেখেনাই 
কষ্টের জীবন্ত লাভা!
কষ্ট নামের অনুভুতি নেই 
মানুষের উপলব্দির সীমানায় আছে শুধুই কষ্ট 
বিলাস!
যাবো এবার সত্যিই যাবো, ধল পাহাড়ের বুড়ী 
হবো!

সাদাত চৌধুরীর অনুকাব্য

1. তোমাকে চিনতে বড্ড কষ্ট হয় 
সেই আগেরটি তুমি আর নেই ,
রুপময়তা, সৌন্দর্য, সৌঠব যাই বলি
কিছুই নেই সেই আগের মতন 
অথচ তোমার রূপের পাগল কে না ছিল?

আজ বেয়াল্লিশ বছর বয়সে _
ছিন্ন বস্রে, ক্ষত বিক্ষত তুমি।
ছেড়া পতাকায় সম্ভ্রম ঢাকার চেষ্টা 
ক্ষুধার্থের তীক্ষ্ণ চাহুনি, রক্তগঙ্গা চারিদিক।
স্বাধীনতার হিংস্র ছোবল তোমার দেহে
মুক্ত হানাদারের নিত্য থাবা তোমার সতীত্বে।

শহিদদের আত্মা কাঁদছে (নিরন্তর)
ধিক্কার দিচ্ছে কবর থেকে।
নিজেকে আজ বড্ড অসহায় লাগছে_
দগ্ধ মন পীড়া দেয় অহরহ
দিতে পারিনি তোমার যথার্থ সম্মান
হে আমার বাংলা_
কি চেয়েছিলে তুমি , পেয়েছ কি তা?
সাম্য সম্প্রীতি তোমার বুকে
পেরেছ কি স্বাধীন হতে আজও?
সাদাত চৌধুরী/
কবিতাঃ আমার বাংলা 
২।
ন্যায়নীতি ধর্ম কর সৎকর্ম
সঠিক সরল পথ পাড়ি দাও সব 
মাতৃভক্তি আরাধনায় ব্রত কর বোধ। 
পাইতে স্বর্গের দেখা সেবা কর তাঁর 
বিধাতা পরে আছে যার মান
পরম মমতাময়ী মাতা তাঁর নাম।

আদরে যতনে ভক্তি চিত্তে
কর সেবা তাঁর অতি সযত্নে।
কোরআন হাদিস মাঝে আছে যে বাণী
স্বয়ং বিধাতা তাঁকে করেছেন সম্মানী।
সংসার মাঝেই তোমার স্বর্গ বিরাজ
মায়ের সেবা করে মিটাও তোমার আশ ।

যদি কর তাঁর যথার্থ সমাদর
জান্নাত মিলিবে তোমার পদতলে মা'র
আখেরাতের চাও যদি করিতে হিত
মায়ের সেবা করে কর তাঁর বিহিত ।
পরকালে পাইবে তুমি তার সম্মানী।

কত জ্ঞানীগুণী কত ধনী মানি
ক'জন করিতে পারি মায়ের যথার্থ খাতির
নিজ স্বার্থে ব্যস্ত থাকি সকলে
মায়ের অবদান জীবনে যাই যে ভুলে।
অসম্মান করিলে তাঁকে করিলে অবজ্ঞা
একুল ওকুল যাইবে তোমার হারাবে পরকাল
কামাতে পুণ্য পার্থিব পুঁজি
বিধাতা'পরে মাতৃ সেবায় হও ব্রতচারী।

কবিতাঃ মাতৃভক্তি
৩।

তুমি হীন, মেঘ ভিড় করে মনের আকাশে 
ভারি হয়ে আসে নিঃশ্বাস দেহের। 
তুমি বিনা পুর্ণ শশীর স্নিগ্ধ চন্দ্রিমাও ম্লান 
হাজারো কথা ভাসে হৃদয় মাঝে। 
স্মৃতির ক্ষরণ যাপিত দলন 
কালের আবর্তন, জীবনের পাতায় তোমাকে খুঁজি।

আমার সত্তা জুড়ে যে টুকু ছিলে তুমি 
আজও সাজিয়ে রেখেছি তেমনি । 
মনটাকে পুষি কেমনে? অবুজ পাখি সে 
একটু ভরসা খুঁজেছিল তোমার মাঝে,
তুমি বুঝলেনা মনের ভাষা।
মনের আকাশে তাকিয়ে দেখলেনা
তোমারই প্রতিচ্ছবি আঁকা ছিল সেখানে ।

যদি কখনও দৃষ্টি দাও নীল গগন পানে
দেখে নিও তোমার আমার ভালোবাসা
যার বসবাস সেই নীলের মাঝে
তুমি চলে গেলে রেখে গেলে কষ্টগুলো
এতো কষ্টের মাঝেও ভালোবাসা জন্মে তোমার জন্য।

কবিতাঃ কষ্টের মাঝেও ভালোবাসা জন্মে 

৪। 
নিশীথ রাত, জেগে আছি
নিকষকৃষ্ণে দেখছি তোমাকে মনের আরশিতে,
প্রশান্তির নিষুতি মাঝে তন্ময় তুমি
স্বপ্নমাখা নিষুপ্ত নয়নে।
আর নিঘুম আমি......

বাহিরে নিশাচরদের খুটখাট শব্দ
দূরে কোথাও হুতোম ডাকছে
জোনাকিরা ব্যস্ত প্রণয় সোহাগে। 
কবিতার শব্দগুলো মগজে ঠুকাঠূকি করছে, 
লিখতে ইচ্ছে হচ্ছেনা, ভাবতেই ভাল লাগছে।

ভাবছি তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখব
কি রূপকে তোমাকে সাজাবো
আজও স্থির করতে পারিনি।
ছন্দ গুলো এলোমেলো, পথ হারাচ্ছে
না না তুমি ভেবনা, আমি ঠিকই লিখে ফেলব
তোমাকে নিয়ে আমার কবিতা।

যে দিন তুমি পাশে আসবে
ছন্দগুলো আমার অলঙ্কার পাবে
পুর্ন হবে আমার কবিতা।

নুরুল আমিন খোকন এর কবিতা

               কি চাও তুমি?
     ------নুরুল আমিন খোকন

কি চাও তুমি
আমাকে স্পর্শ করতে?
তোমার চোখের পত্র পল্লবে হাত রাখ
দু'চোখেরর বারিধারায় কি
তোমার হৃদয়াকাশ সিক্ত  হচ্ছে?
তবে হ্যাঁ আমি আছি তোমার মন মন্দিরে
নীল অর্ণবের বিশালাতায়
সাতঁরে বেড়াচ্ছি অবিরত।
কি চাও তুমি
আমার ভালোবাসা?
তবে হাত রাখ তোমার উষ্ঞ দুটি ঠোঁটে
কিছু পেয়েছ?  পাওনি?
তোমার বুকের বামপাশে হাত রাখ
দেখোতো হৃদস্পন্দনের টকটক শব্দ
শুনতে পাও কি না?
আমি মিশে আছি তোমার
শিরায় শিরায়।
তুমি কি চাও?
ভালোবাসার ভেলায় চড়ে ঐ
পূর্ণিমা রাতে জোসনা স্নান দেখতে
আমাকে তুমি খুজে পাবে
তোমার কপালে ঐ লাল, কালো টিপে
চোখের কাজলে, হাতের কাঁকন চুড়ির আর
পায়ের নূপুরের রিনিঝিনি ধ্বনিতে।
তোমার স্বপ্নে কি আমাকে চাও?
খুঁজে দেখ আমি আছি তোমার
দুষ্টমিষ্ট আদরে ছোঁয়া ছোট্ট একটা
চুমার মাঝে কিংবা আকাশ থেকে
ঝরে পরা হঠাৎ বৃষ্টি ধারায়,
রাত জাগা জোনাকির আলোতো কিংবা
বেলী শিউলির সুঘ্রাণে।
আমাকে কি তোমার সঙ্গে চাও?
তবে অনুভর কর আমি আছি
বিকেলের প্রজাপতিররঝাঁকে,
তোমার হাতে হাত রেখে চলছি।
কোন এক ক্লান্ত দুপুরে, তোমার
ওড়নার আঁচলের তলে।
          না না তুমি আমাকে পাবে
গ্রীষ্মের প্রচন্ড রোদে অথবা শিশির
ঝরা কোন এক শীতের সকালে কুন্ডলীর
মাঝে কিংবা গোধূলির সন্ধ্যায় নীড়ে
ফিরা পাখি ভিড়ে।