১ম বর্ষ,৫ম সংখ্যা,১৫ ই জুন ,২০১৪। ১লা আষাঢ়,১৪২১

১ম বর্ষ,৫ম সংখ্যা,১৫ ই জুন ,২০১৪। ১লা আষাঢ়,১৪২১

Monday, April 14, 2014

অরুণ বহ্নি জ্বালাও চিত্ত মাঝে



অরুণ বহ্নি জ্বালাও চিত্ত মাঝে
ইলা মুৎসুদ্দী
শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান
সব দুর্বল সংশয় হোক অবসান
তব জাগ্রত নির্মল নূতন প্রাণ
ত্যাগব্রতে নিক দীক্ষা
বিঘœ হতে নিক শিক্ষা
নিষ্ঠুর সংকট দিক সম্মান
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা ------- নববর্ষের নব প্রভাত যা কিছু গ্লানি, জীর্ণ-শীর্ণ-বিদীর্ণ, পুরাতন জরাগ্রস্থ সব বৈশাখের রুদ্র দহনে পুড়ে অঙ্গার হোক, সকল না পাওয়ার বেদনাকে পিছনে ফেলে প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শুচি ও শুদ্ধ করে তুলতেই আবহমান কাল থেকে বাঙালির জাতীয় জীবনে আনন্দময় নতুন বছরের প্রত্যাশায় নববর্ষ উদযাপিত হয়বিগত বছরের যাপিত জীবনের কষ্ট গ্লানি মুছে সংযোজন বিয়োজনের মধ্যে দিয়ে আমরা পালন করি পহেলা বৈশাখযার আমেজ ছড়িয়ে যায় সবখানেছোট-বড় সবার হৃদয় মাতিয়ে দিতে পহেলা বৈশাখের রয়েছে আলাদা মাধুর্যআমরা আশা করি ১৪২১ সালের নতুন ভোর কূয়াশার বুক চিরে টকটকে লাল সূর্যটা নিয়ে নতুন দিনের বারতা নিয়ে আসবেপহেলা বৈশাখ মানেই তারুণ্যের উচ্ছাস আর আনন্দের হিল্লোলআবাল-বৃদ্ধ বণিতা, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী সকলেই নতুন বছরের নব সূর্যের আলোয় আনন্দ উচ্ছাসে উদ্ভাসিত হয়ে ফুটবেতাইতো কবির ভাষায় বলতে হয় ---------
প্রভাতসূর্য, এসেছে রুদ্রসাজে
দুঃখের মাঝে তোমারি তূর্য বাজে
অরুণ বহ্নি জ্বালাও চিত্ত মাঝে,
মৃত্যুর হোক লয়
বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখবাঙালি জীবনের অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণের দিনটিপাহাড়ী বাঙালী সবাই এই দিনটিকে ভিন্ন ভিন্ন আমেজে পালন করেবাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান তিনটি জাতিগোষ্ঠী ত্রিপুরা, মারমা এবং চাকমারা দিনটিকে যথাক্রমে বৈশুখ, সাংগ্রাই ও বিজু উৎসব নামে দিনটিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিপালন করে আসছেঅবশ্য বর্তমানে তিন জাতিস্বত্ত্বা যৌথভাবে বৈসাবি নাম দিয়ে পালন করা শুরু করছে দিনটিকেবৈসাবি উৎসবের অন্যতম আকর্ষন হচ্ছে পানি খেলা
এই দিনটির সাথে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগ রয়েছেগ্রামে এই দিনে মানুষ ভোর ঘুম থেকে উঠে গবাদি পশুকে ¯œান করিয়ে তাদের গলায় মালা দেয়বৈশাখের নতুন নতুন ফুল দিয়ে মালা সাজিয়ে বাড়ির দরজায় টাঙিয়ে দেয়তারপর নতুন জামাকাপড় পড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায়প্রায় প্রতিটি বাড়িয়ে এ সময় খৈ আর হাতে তৈরী  লাড়দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়কোন কোন গ্রামে এ সময় বৈশাখী মেলা বসেমেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজনবন্ধুবান্ধবেরা একত্রিত হয়ে বিকালে মেলায় বেড়াতে যায়কোথাও কোথাও দিনটি উপলক্ষে নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা কিংবা বলী খেলার আয়োজনও করা হয়
শহরেও নানা বৈচিত্রে দিনটিকে উদযাপন করা হয়কর্মচঞ্চল যান্ত্রিক জীবন থেকে সবাইকে মুক্তি দেয় দিনটিরাজধানী ঢাকায় ছায়ানটএর শিল্পীরা সমবেত কন্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরের সূর্যকে বরণ করে নেয়রমনার বটমূলে দিনব্যাপী চলে নানা আয়োজনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ইনষ্টিটিউটের ছাত্ররা এদিন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেশোভাযাত্রাটি চারুকলা ইনষ্টিটিউট থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুণরায় চারুকলা ইনষ্টিটিউটে এসে শেষ হয়মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বিভিন্নভাবে অংশ নেয়কারো হাতে থাকে ফেষ্টুন, কারো হাতে প্লে কার্ডকেউ কেউ নিজেকেই বর্ণিল সাজে সাজায় বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব মুখে অঙ্কন করে কিংবা রং বেরঙের মুখোশ পড়েএই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মূল আয়োজন বসে ডি সি হিলেবিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিনটিকে বরণ করে নেয়এখানে অবশ্য বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণ এই দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান থাকেশিশু সংগঠন ফুলকীতিন দিন ধরে  উৎসবটিকে নানা আয়োজনে বরণ করেএছাড়া নগরীর মহিলা সমিতি স্কুলে বসে বর্ষবরণ মেলা বা বৈশাখী মেলা
আমরা এবার ভিন্নভাবে নতুন আঙ্গিকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবকারণ আমরা বাঙালী জাতি, বীরের জাতিআমরা আবারো তা প্রমাণ করেছি ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে আমরা দীর্ঘতম বিশ্ব মানব পতাকায় গিনেজ রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছিসেই সাথে ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে আমরা আবারো সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিআমাদের আছে সফলতার দীর্ঘ কাহিনীমুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতার আনন্দ-উচ্ছাসে বাঙ্গালী জাতি নববর্ষকে ধারণ করবে এবারমানবতা বিরোধীদের মতো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করা হচ্ছে সময়ের আবর্তনেবিচার কাজ চলছে খুবই দ্রুতগতিতেযারা দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছে, আর যারা শহীদ হয়েছে তাদের সকলেই আজ কিছুটা হলেও তৃপ্তকারণ যুদ্ধাপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছেবাঙালী জাতি কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে নাবারে বারে তাপ্রমাণিত হয়েছেএজন্য পহেলা বৈশাখ আনন্দ-উদ্দীপনা আর বর্ণাঢ্য উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবেবাঙালি সং®কৃতির বৃহৎ আয়োজন বৈশঅখী মেলা এবং নববর্ষ উদযাপননববর্ষে শিশু-কিশোর এবং তরুণ-তরুণীদের সাজ-সজ্জায় থাকে ভিন্নতাসেদিন মনে হয় সত্যিই আমরা মনে-প্রাণে বাঙ্গালীআমাদের সং®কৃতি আর ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক নববর্ষনতুনবছরের রঙীন সাজে আমরা নিজেদের রাঙ্গিয়ে নেই, নববর্ষের আগমনে নতুন প্রেরণায় জেগে উঠি, উজ্জীবিত হই
এক কথায়, এদিনটি বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে উৎসব আমেজ আর বসন্তের দিননানা রঙের পাঞ্জাবী আর আলপনা আঁকা শাড়ি, লাল-সবুজ আর সাদার সংমিশ্রণে ফ্যাশনের নতুনত্ব সবাইকে মাতিয়ে রাখে বৈশাখের গাটছড়ায়দূর্যোগ কালীন সময় কিংবা দেশবিরোধীরা যখন মাথাছাড়া দিয়ে উঠে  তখন আমার উৎসব প্রিয় বাঙ্গালীরা এই দিনের মতো করে  সম্মিলিত ভাবে জেগে উঠলে দেশ থেকে সকল অপশক্তির নিরোধ হবে, উন্নয়নের জোয়ারে উন্নতির শিখরে পোঁছাবে বাংলাদেশ
অনেক ভালো-মন্দের, সুখ-দুঃখের সম্মিলনে আমাদের জীবনলিপিবিগত বছরে আমাদের কারো জীবনে ঘটে গেছে অনেক দুঃখময় ঘটনা, আবার কারো জীবন আনন্দ-ভালোবাসায় হয়েছে পরিপূর্ণঅপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা থাকবেইসবকিছু ভুলে গিয়ে সকল দুঃখ-হতাশা, গ্লানি, ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে সততা, একাগ্রতা, সৃষ্ঠিশীলতা প্রয়োগ করে আমরা এগিয়ে যাব দৃঢ় প্রত্যয়ে১৪২১ সাল আমাদের সবার জন্য নিয়ে আসুক নব নব প্রাপ্তি আর নব নব আনন্দ
স্বাগতম বাংলা নববর্ষ ১৪২১ বঙ্গাব্দসকল অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করে নতুনের শুভ সূচনা হোকসকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছাপরিশেষে কবিগুরুর চরণ দিয়েই শেষ করছি ঃ
চলো যাই কাজে মানবসমাজে, চলো বাহিরিয়া জগতের মাঝে,
থেকো না অলস শয়নে, থেকো না মগন স্বপনে।।
যায় লাজ ত্রাস, আলস বিলাস কুহক মোহ যায়
ঐ দূর হয় শোক সংশয় দুঃখ স্বপনপ্রায়
ফেলো জীর্ণ চির, পরো নব সাজ, আরম্ভ করো জীবনের কাজ
সরল সবল আনন্দমনে, অমল অটল জীবনে।।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

নীল চক্রবর্তীর অনুগল্প

অণুগল্প
কথা ।

তাকিয়ে থাকি এখন সেই সময়ে ,যখন কিছু অপরিণত মস্তিস্কের আবদারে খণ্ডিত
আমার আপন ভুবন ।
আজ আমি তাই , নগর বিহীন বিশ্বনাগরিক , নেই মোর কোন পরিচয় , আছে শুধু,
দুমুঠো অন্নের হাহাকার
আর ফিরে ফিরে দেখা সুবর্ন সময় গাঙচিল আর ফড়িং মুহুর্তের ......চোখের সীমায় ।

যা হারায়, তা হারায় ... ফিরে নাকো আর ... তবু তার রেশ রয়ে যায় আজীবন,
মনের গহীন কোনও এক নির্জনতায় ... , আর সেই অব্যক্ত বেদনারা চলার পথে
অশ্রু ঝরায়।

নিশ্চিন্ত জীবন ছিল এক সুদুর সেই প্রান্তরে ... হাসি-কান্নায়,
মান-অভিমানে (হয়ত) , কিন্তু আজ হাসি-কান্না, মান -অভিমান বর্জিত এক পাথর
জীবন ।। যতদূর দৃষ্টি যায় , শুধুই অন্ধকার ।

অন্ধকার ভেঙ্গে ভেঙ্গে আলোকের পথ সন্ধান , প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত সন্মান
,। বেঁচে থাকি বা আছি সেই বাঁচার অর্থহীনতায়।
শুধুই রক্তের স্রোতে স্নান ... সারাটা জীবন ।

২।প্রেম

পুর্ণিমা রাত
চাঁদ ঠেস দিয়ে আকাশের গায়ে ,
আলপনা আঁকে
তোমার গভীর চোখে ......

আলপথ ধরে
উদাসী সময় হেঁটে যায়
কে জানে কোন বিরহীর ঠিকানায় ...

আমি শুধু দেখি ,
তোমার গভীর চোখে
জ্যোৎস্নার খেলা...

আনমনে,
আর
ডুবে যাই সময়ের স্মৃতি ভুলে
অনন্ত ভালবাসায় .........।।