দুই জীবনঃ বস্তুবাস্তবতা,
ভাববাস্তবতা
... ... মুহাম্মদ ইউসুফ
একজন লেখক, দার্শনিক, কবি
বা শিল্পী শেষ পর্যন্ত কোথায় বাস করবেন ?
নিজের অন্তরজগতে, অন্তর্বাস ?
কবি’র নির্জনতাকে কি একাকীত্বের স্বেচ্ছানির্বাসনে
ফেলা হবে ?
আত্মভুবনে বসবাস কি আত্মমুখিতা ?
জীবনের ছুটাছুটি, রুটিরুজির শ্রম-গ্লানি অন্তরের
শূন্যতাকে পূর্ণ করে না ।
পূর্ণতা, স্থিতি চায় অন্তর-আত্মা-মন ।
চায় মিলন ও মুক্তি ।
এ মিলন, স্থিতি ও পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র
কিন্তু কেন ?
মৃত্যু কি জীবনকে খণ্ডিত করেছে ? নাকি
পূর্ণতা দিয়েছে ?
জীবন আকর্ষনীয় । জীবনে অভাব থাকলেও মোহ আছে, প্রেম
আছে, স্নায়ু-সুখ আছে,
উত্তেজনা আছে, উল্লাস আছে ।
কিন্তু তারপরেও কি-যেন-একটা নেই । এই কি-যেন-টা দেশজয়ে, মাটির
দখলে,
অর্থ- বিত্তে, আপাত ক্ষমতার দাপটে, ভোগসুখে
পাওয়া যায় না । এখানেই
মানুষের অপূর্ণতা, শূন্যতা, একাকীত্ব
। এই অপূর্ণতা, শূন্যতা, একাকীত্ব
অধিকাংশ মানুষই অতিক্রম করতে পারে না ।
মানুষের মুক্তির, স্থিতির, পূর্ণতার
আকাঙ্ক্ষা কীযেননেই-টাকে অর্জন করার লক্ষ্যে ।
জ্ঞানীমাত্র এই সত্যটা তীব্রভাবে উপলব্ধি করেন ।
আমরা কোথায় ছিলাম ?
যেখানে ছিলাম সেখানে স্থিতি ও শান্তি ছিল নিশ্চয়ই ।
এটা একারণে বলছি যে,
স্থিতি ও শান্তির অভাবটা এখানে (পৃথিবীতে) এসে বুঝতে পারছি ।
আমি অভাবী । আমার খাদ্যের প্রয়োজন ।
জীবনধারনে আমাকে দৌড়াতে হয় । চাকুরি, ব্যবসা
করতে হয় ।
আমাকে তাড়না দেয়া হয়েছে । বাধ্য করা হয়েছে ।
অবশ্য জীবনধারনে আনন্দ নিশ্চয়ই আছে, ফলে
শ্রম গায়ে লাগে না, মনে লাগে না ।
ক্ষুধা নিবারণে রসনার তৃপ্তি আছে । সহধর্মিনীর প্রেমে যাদু আছে ।
কিন্তু মনের শূন্যতা ?
কি-যেন নেই । কি-যেন নেই । কি-যেন চাই । কি-যেন চাই ।
এখানেই রহস্যটা । এই রহস্যটা নিয়েই নোবেল বিজয়ী আফ্রিকান ঔপন্যাসিক
নাদিন
গার্ডইমার বলেছেন, ‘ আমার মধ্যে যে
প্রকৃতিগত কল্পনাশক্তি রয়েছে তার
মাধ্যমে যে সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটবে তা কিন্তু আমার বাস্তব জীবন থেকে
আলাদা হবে । একজন লেখককে প্রকৃত আন্তরিক বিস্ময় নিয়ে পৃথিবীকে দেখায়
অভ্যস্ত হতে হবে ।‘
এটি কেন ?
এটি একারণে যে, জ্ঞানীমাত্র জীবনের গ্লানিকে পাশ
কাটাতে চান । জ্ঞানীগণ
হাঁসের মত জীবনযাপন করেন । হাঁস পানিতে সাঁতার কাটে কিন্তু তীরে এসে
গাঝাড়া দিয়ে ময়লা পানি, আবর্জনা ফেলে
দেয় । এইযে ‘ধরি মাছ নাছুঁই পানি‘ –
এটার প্রয়োজন আছে । এই প্রয়োজনীয়তা প্রকৃতিগত । তা নাহলে মোহের পাঁকে
অন্ধগলিতে জীবনবাস হবে । সত্যভুবনে প্রবেশ করা যাবে না ।
‘বাস্তব জীবন থেকে আলাদা’ যে সৃজনশীলতার
জগত, যে বোধের জগত, মননের
জগত,
চিন্তার জগত, চিন্তাভ্রমণের জগত – এটিই
প্রকৃত জগত । এই সত্যজগতটিতে
একমাত্র মানুষেরই প্রবেশাধিকার, অন্য
কোনো প্রাণীর প্রবেশাধিকার নেই,
দেয়া হয়নি ।
এইযে বাস্তবজীবনে ( পার্থিব জীবনে ) বসবাস করেও অন্যভুবনে, অন্যজগতে
বসবাসের তীব্র আকাঙ্ক্ষা – ‘হেথা
নয়, হোথা নয়, অন্য
কোনোখানে’ – অন্য
কোনো লোকে, জগতে বসবাসের আগ্রহ এবং অন্যজগতে
বসবাসের আকাঙ্ক্ষায় স্থিতি,
মুক্তি ও শান্তিলাভের চিন্তা ও প্রবল আগ্রহ – এটাই
প্রমাণ করে যে, আমরা
আসলে অন্যজগতে ছিলাম এবং যখন, যে
সময়ে অন্যজগতে ছিলাম তখন দুশ্চিন্তা ছিল
না, অভাব ছিল না, অভিযোগ
ছিল না । শান্তিতে, নিরাপদে ছিলাম ।
তাহলে আমরা কি দেখলাম, বুঝলাম ?
ক।
শান্তি, স্থিতি ভঙ্গ হয়েছে ।
খ।
অভাবে পড়ে গেছি ।
গ।
বিচ্ছিন্ন হয়েছি ।
হ্যা, বিচ্ছিন্নতাই মূল সমস্যা ।
মানবজীবনের, মানবাত্মার মূলসমস্যা এই যে, মানবাত্মা
পরমাত্মা থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়েছে । যখন সে (মানবাত্মা ) পরমাত্মায় ছিল, কোনো
সমস্যা ছিল
না ।
তাহলে এই সিদ্ধান্তে আসতেই হয় যে, সমস্যা
সৃষ্টি হয়েছে ।
অন্তরের, আত্মার শূন্যতা ও একাকীত্ব ঘুচাতে যদি
আমরা ব্যর্থ হই তাহলে
নোবেল বিজয়ী ওকতাভীও পাজ-এর মতো আমাদেরকে ক্রমাগত ধারাবাহিকভাবে
সারাজীবন
ধরে একথাটি বলে যেতে হবে – ‘মানুষ
কখনও একাকীত্ব অতিক্রম করতে পারে না’ ।
কথাটি ‘শূন্যতা অতিক্রম’ কিংবা
‘একাকীত্ব অতিক্রম’ বলা ঠিক হবে না ।
কথাটি হবে – ‘বিচ্ছিন্নতা অতিক্রম করা’ অর্থাৎ
পরমকে পাওয়া, পরমের (
আল্লাহ্র ) সান্নিধ্যলাভ, নৈকট্যলাভ
। এখানে একটি বিষয় খুবই
গুরুত্বপূর্ণ । আল্লাহ্র নৈকট্যলাভ বা সান্নিধ্যলাভে
পরমাত্মায় ( অর্থাৎ আল্লাহ্ পাকের জাতসত্ত্বায় ) সম্পূর্ণ বিলীন
হওয়ার
( ফানা হয়ে একেবারে মিশে যাওয়া ) ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল, অলীক
উদ্ভট
কল্পনা । কারণ, পরমাত্মা ( আল্লাহ্ ) তাঁর এক ও একক
সার্বভৌমত্ব ও
মহাপরাক্রম জাতসত্ত্বা নিয়ে আছেন । মহান আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী,
সর্বশক্তিমান ও সর্বশ্রোতা । আমরা সর্বমহান আল্লাহ্র নিকট থেকে
এসেছি
এবং সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্র নিকটেই ফিরে যাচ্ছি । এটি চরম সত্য ।
আল্লাহ্র নৈকট্যলাভ বা সান্নিধ্যলাভে স্বস্তি-সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা
অবশ্যই পাওয়া যাবে । এই নিরাপত্তাবোধ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের মনের
গভীরে
নেই । দৃঢ়বিশ্বাস ( প্রতীতি ), জ্ঞানের
গভীরতা, অটলতা-দৃঢ়তা না থাকার
কারণে বেশীরভাগ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, একাকীত্ব
অতিক্রম করতে পারে
না । ফলে মানবজীবন ( সাধারণ মানুষের জীবন ) শেষপর্যন্ত শূন্যতা ও
একাকীত্বের লক্ষ্যহীন বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ।
কূটনীতি, দেশদখল, ভোট,
দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ, ভাষাবোধ
ইত্যাদি যে
আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নিয়েছে তাহলো একসাথে, একযোগে
থেকে পার্থিব জীবনের
সমস্যা সমাধানের জন্যে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসমাত্র ।
কিন্তু মানবমনের মূলসমস্যা – বিচ্ছিন্নতাবোধের
সমস্যা ।
কূটনীতি, পরমাণু গবেষণা, ভোট,
দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ, ডলার-পাঊণ্ড,
তেল,
বুলেট, রাজনীতি, কম্পিউটার,
মহাকাশ গবেষণা, মিসাইল দিয়ে মানবমনের
মূলসমস্যা – বিচ্ছিন্নতাবোধের সমস্যার সমাধান হবে
না ।
অস্তিত্ব রক্ষার্থে ( মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত ) তেল-আলুর প্রয়োজন ।
কিন্তু
শুধুমাত্র তেল-আলুতে মন ভরে না ।
‘পাগল মন, মনরে, মন
কেন এত কথা বলে ... ‘ মন এতকথা একারণে বলে – মন,
আত্মা যে পরমাত্মার ( আল্লাহ্র ) নিকট থেকে থেকে এসেছে সেই পরমাত্মা
(
আল্লাহ্ ) অনেক কথা বলেন । মহাপবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন মহান আল্লাহ্রই
কথা । যেহেতু পরমাত্মা ( আল্লাহ্ ) অনেক কথা বলেন, সেহেতু
আমরা যারা
পরমাত্মা ( আল্লাহ্ ) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি আমরা তো আরও বেশি কথা
বলব !!
আমাদের তো দুঃখকষ্ট, যন্ত্রণা আরও
বেশি । বাজার করতে হয় আমাদের, বিরূপ
আবহাওয়া মোকাবেলা করতে হয়, রোগবালাই
আছে, রুটিরুজির জন্যে অধিকাংশ
মানুষকে জীবনের বেশীরভাগ সময় ব্যয় করতে হয় ।
আমরা ( মানুষ, মানবাত্মা ) পরমাত্মা থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়েছি । একারণেই
আমাদের মন সারাক্ষণ বিরহী, মিলনের
তীব্র আকাঙ্ক্ষী । [ পাগল মন বলা ঠিক
নয়, কারণ, বিচ্ছিন্ন
মন-আত্মা মূল পরমআত্মার ( আল্লাহ্র ) কাছাকাছি
থাকতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক, মন-আত্মার
এই আকাঙ্ক্ষা খুবই স্বাভাবিক,
তাই মনকে পাগল বলা হলো অজ্ঞতা, মূর্খতা
]
বিচ্ছিন্ন কেন করা হলো ?
লক্ষ্য কি ? কারণ কি ?
কারণ এই যে, আল্লাহ্ প্রকাশিত হতে চেয়েছেন ।
সৃষ্টির কারণেই আল্লাহ্র
সকল গুণাবলী প্রকাশিত হয়েছে । মোমিনের কলবের আয়নায় আল্লাহপাক নিজেকে
প্রকাশিত-প্রতিফলিত দেখতে চেয়েছেন । মোমিনের (দৃঢ়-অটল বিশ্বাসী
আমলকারি
মুসলিম [প্রেকটিসিং মুসলিম]) কলবে ( আত্মা-আয়নায় ) আল্লাহ্ প্রকাশিত
-প্রতিফলিত । আল্লাহ্কে মানবীয় চামড়ার চোখে দেখা অসম্ভব । মোমিনগণ
কলবের
আয়নায় ( আত্মার আয়নায় ) আল্লাহ্কে উপলব্ধি করেন, শুকরিয়া
আদায় করেন (
ধন্যবাদ দেন ) এবং স্থিতি-শান্তি-নিরাপত্তা লাভ করেন ।
মানবাত্মার স্থিতি-শান্তি- নিরাপত্তা লাভের এই একটিই উপায়-পদ্ধতি ।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পণ করা ।
মানবাত্মা-পরমাত্মার এই রহস্যই জীবন ।
এই জীবনরহস্যরসে বিস্ময়ে–আনন্দে মেতে
থাকাই, ডুবে থাকাই জীবনের একান্ত,
প্রকৃত আস্বাদন এবং অবশ্যই তা ভাববাস্তবতার চিন্তাভ্রমণে । ‘হেথা
নয়,
হোথা নয়, অন্য কোনোখানে’ – এই
অন্য কোনোখানেটা মূলে, বিরহে, এবং
যুগপৎ
মিলনে । পরমাত্মা আল্লাহ্কে খুঁজতে, কাছে
পেতে মানুষকে যেমন প্রকৃতিকে (
নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ) পাঠ করতে হয় ( গবেষণা করতে
হয় ), তেমনি আত্ম-পাঠ
অর্থাৎ নিজেকেও পাঠ করতে হয় । ‘নিজেকে
চেন, তাহলে আল্লাহ্কে চিনতে
পারবে’ । এভাবেও বলা যায় – ‘আল্লাহ্কে
চেন, তাহলে নিজেকে চিনতে পারবে’ ।
বিষয়টি অত কঠিন কিছু নয় । আন্তরিকতার সাথে গভীর মনোযোগ দিয়ে খেয়াল
করলেই
হয় । কারণ, মহান স্রষ্টা আল্লাহ্পাক তাঁর
স্বভাবেই আমাদেরকে সৃষ্টি করে
এখানে ( পৃথিবীতে ) পাঠিয়েছেন । ফলে মনটা-আত্মাটা নির্মল,
পবিত্র, মোহমুক্ত থাকলে তাঁকে ( আল্লাহ্কে )
নিজের ভিতরই উপলব্ধি
করা যায় ।
আফ্রিকান ঔপন্যাসিক ( নোবেল বিজয়ী ) নাদিন গারডিমার বলেছেন, ‘সৃজনশীলতা
বাস্তব জীবন থেকে আলাদা হবে এবং একজন লেখককে আন্তরিক বিস্ময় নিয়ে
পৃথিবীকে দেখায় অভ্যস্ত হতে হবে’ – একথাটির
মৃদু সংশোধন প্রয়োজন । কথাটি
আসলে হবে – সৃজনশীলতা বস্তুজীবন থেকে আলাদা হবে ।
বস্তুজীবনও কিন্তু
বাস্তবজীবন । বস্তুজীবনকে অস্বীকার কিংবা একেবারেই বাদ দেয়া যেহেতু
যায়
না, সম্ভব নয় বলেই – এটি
অবশ্যই পার্থিব জীবনের সীমাবদ্ধতা – যেটি কবি
ইকবাল বলেছেন ।
বস্তুজীবনও বাস্তবজীবন এবং ভাবজীবন বা চিন্তাভ্রমণের জীবনও
বাস্তবজীবন ।
এই দুইজীবনের বৈপরীত্য বা সংঘর্ষই জীবনের গ্লানির কারণ, একঘেয়েমির
কারণ ।
অবশ্য, গর্দভ-মূর্খ ধরনের মানুষ জীবজীবনই
কাটিয়ে দেয় সমগ্র জীবনসময়ে ।
বস্তুজীবনে, স্নায়ুজীবনে, ভোগজীবনে
তুষ্ট থাকে, খায়-দায়-ল্যাদায় ।
ভাবজীবনের, সত্যজীবনের সত্যজগতের আনন্দসংবাদ পায়
না, সত্যজগতের (
আল্লাহ্ময় জগতের ) আনন্দভ্রমণে যেতে পারে না । অবশ্য বিপদে-আপদে
পড়লে
তারা আল্লাহ্কে ডাকে, বিপদ কেটে গেলে
আবারও জীবজীবনে বসবাস শুরু করে ।
বিস্ময়কর ও দুঃখজনক সংবাদ এই যে, গর্দভ-মূর্খ
ধরনের মানুষের জঙ্গলই দুনিয়াজোড়া ।
ভাববাস্তবতার বিষয়টি পৃথিবীতে কম আলোচিত হয় । মানুষ জীবন নিয়ে
দৌড়াদৌড়ি
করে, হাইজাম্প, লংজাম্প
দেয় – একসময় বৃদ্ধ হয় । মৃত্যুর আগে একটুআধটু
চিন্তা হয়, ভয় হয় ।
তখন দুর্বল মস্তিষ্কে, দুর্বল স্নায়ুতে
আর কতটুকু সংবেদনশীলতা থাকে ?
সত্যজগতে প্রবেশের সাধনার সময় তখন থাকে না । ‘সময়
গেলে সাধন হবে না’ –
লালন । তাছাড়া দীর্ঘ জীবনাচার ( অভ্যাস ) তাকে ‘ঘোর’-এ
রাখে । অবশেষে – ‘
আইলাম আর গেলাম, পাইলাম আর খাইলাম, দেখলাম-শুনলাম
কিছুই বুঝলাম না’ ।
পৃথিবীব্যাপী ভাববাস্তবতার উর্বর চাষাবাদ করা গেলে ৭০০ কোটি মানুষের
এই
পৃথিবী সম্পূর্ণ অন্যরকম আনন্দময় হতো । যা নিউ মিলেনিয়ামের
মানবসম্প্রদায়
কল্পনা-ধারণা করতে পারছে না ।
ভাববাস্তবতার জীবন এক জ্যোতির্ময়-আনন্দময় শক্তিশালী জীবন ।
এজীবনে হতাশা নেই, ক্ষয় নেই, গ্লানি
নেই, ভয় নেই । আছে স্থিতি ও নির্ভরতা
। আছে
শান্তি-শোকর-আনন্দ । শূন্যতার হাহাকার নেই, অভিযোগ
নেই, অভাব নেই ।
পরিপূর্ণ এক মানবজীবন ।
ভাববাস্তবতাই চরম ও পরম বাস্তবতা ।
বস্তুবাস্তবতাকে অস্বীকার করে নয়, পূর্ণ
পাশ কাটিয়ে নয়, বস্তুবাস্তবতাকে
ব্যবহার করেই, বস্তুবাস্তবতার ঘোড়ায় চড়েই
ভাববাস্তবতার
জ্যোতির্ময়-আনন্দময়-আলোকিত জগতে/জীবনে বসবাস করতে হবে এখানে (
পৃথিবীতে )
থেকেই । তাহলেই আলোকিত জীবন, তাহলেই
সার্থক মানবজীবন । তাহলেই ‘বিপদে
মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা’ – তাহলেই
আত্মা-পরমাত্মায় (
মানবাত্মার সাথে মহান সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ্র মিলন ) মিলন –
তাহলেই স্থায়ী আনন্দবাস ।