১ম বর্ষ,৫ম সংখ্যা,১৫ ই জুন ,২০১৪। ১লা আষাঢ়,১৪২১

১ম বর্ষ,৫ম সংখ্যা,১৫ ই জুন ,২০১৪। ১লা আষাঢ়,১৪২১

Sunday, June 15, 2014

সাপ নিয়ে গল্প



সাপ
আজ মকবুল সাহেবের মেজাজ খুব খারাপ!বাড়ির থেকে বউয়ের সাথে ঝগড়া করে বের হয়েছেন!পেশায় তিনি একজন মনস্তত্ত্ববিদ,

বা সহজ ভাষায় যাকে সাইক্রিয়াটিস্ট বলে।তার ডাক্তার হিসেবে বেশ পসার আছে।সারাদিন তাকে তার রোগীদের সমস্যা নিয়ে পার্সোনাল চেম্বারে বেশ ব্যাস্ত থাকতে হয় তারপরও তার ওয়াইফ মোনা মাঝে মাঝেই ছোটখাটো সাংসারিক বিষয় নিয়ে বেশ ঝামেলা পাকায়!তার আর ভালো লাগেনা সব ছেড়ে ছুড়ে অনেক দূরে চলে যেতে মন চায় কিন্তু কি করবেন চিকিৎসকের দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে করা শপথ তিনি ভুলতে পারেননা,তাই তার মনের ইচ্ছা আজীবন রোগীদের সেবা করেই পুরো জীবনটা কাটিয়ে দেবেন!

মাথা ব্যাথাটা আরও বেড়ে যাচ্ছে তার তাই অন্যদিনের চেয়ে আগেই ভাবছেন চেম্বার থেকে বাড়ি ফিরবেন।মকবুল সাহেব ইন্টারকমে কল করে তার রোগী দেখার কক্ষে ডেকে পাঠালেন তার পার্সোনাল সেক্রেটারি রফিককে।রফিক এক দৌড়ে ছুটে এলো তার রুমে!তিনি বিরক্ত মুখে রফিককে বললেনঃ"রফিক আমার শরীরটা আজ ভালো না,আর রোগী দেখবো না বাড়ি ফিরে যাব,

তুমি আর কাউকে সিরিয়াল দিওনা আগামীকাল আসতে বলো বাকি রোগীদের।"

রফিক একটু মাথা চুলকে ইতস্তত করে বললঃ"স্যার একজন রোগী অনেক দূর থেকে এসে বসে আছে বলছে আপনার সাথে দেখা করা খুব দরকার,আমার মনে হয়না তাকে বলার পরেও সে যাবে।এই রোগীর পর আর কারও সিরিয়াল রাখবো না।ডাকবো স্যার তাকে??"

মকবুল সাহেব বিরক্ত মুখে বললেনঃ"ওকে আসতে বলো,এদের জ্বালায় আমি নিজেই পাগল হয়ে যাব একদিন!"

রফিক দৌড়ে রুম থেকে বাইরে চলে গেলো আর দু মিনিটের মধ্যেই মকবুল সাহেবের কক্ষে প্রবেশ করলো এক রোগা ধরণের লম্বা লোক!লোকটা এতো লম্বা যে একটু কুঁজো হয়ে গেছে।পরনে তার একটা চকচকে শার্ট আর ধবধবে সাদা লুঙ্গি!দেখেই বোঝা যাচ্ছে হয় মফঃস্বল শহর নাহয় গ্রাম থেকে এসেছে!এই ধরণের রোগী মকবুল সাহেবের খুব অপছন্দ,কারন এরা কথা বেশী বলে।এইভাবেই তার মাথা ব্যাথা করছে তবুও রোগীকে তিনি তার সামনের চেয়ার দেখিয়ে বললেনঃ"বসুন কি নাম আপনার??"

রোগী একটু ইতস্তত করে তার টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে ধীর ভঙ্গিতে বসলো।এরপর একটু কাশি দিয়ে গলার শ্লেষ্মা সাফ করে অনেকটা চিকন গলায় বললঃ"স্যার আমার নাম আশরাফ চৌধুরী"

এবার মকবুল সাহেব বললেনঃ"কি সমস্যা আপনার??'

সে বললঃ"স্যার আমি আমার চারপাশে শুধু সাপ দেখি,তারা বিভিন্ন ভাবে আমার কাছে আসতে চায় শরীরের ওপর দিয়ে বেয়ে চলে যায় মাঝে মাঝে ফণা তোলে কিন্তু সচরাচর কামড় দেয়না!"

মকবুল সাহেব হেলান দিয়ে বসেছিলেন তার চেয়ারে এবার একটু সোজা হয়ে বসে রোগীকে তার অভিজ্ঞ চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন!নাহ তেমন কিছু স্পেশাল ব্যাপার তার চোখে পড়ল না এই রোগী নিশ্চিত হেলুসিনেসনে ভুগছেন নাহলে সব জায়গায় সাপ দেখবে এ কেমন কথা!মকবুল সাহেব আবার জিজ্ঞেস করলেন যে,"আশরাফ সাহেব এই সমস্যা কবে থেকে শুরু হয়েছে??"

রোগী টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানি তুলে নিয়ে এক পলকে গিলে ফেলল এরপর ধীরে ধীরে বলতে লাগলোঃস্যার আমি এখান থেকে অনেক দূরের গ্রামের এক বিশাল ব্যবসায়ীর ছেলেআমার বাবা মারা যাওয়ার সময় বিশাল সম্পদ আমার জন্য রেখে যান। গ্রামের লোক বলে আমি কিন্তু স্যার অশিক্ষিত নয়,আমি আমাদের গ্রাম থেকে নিকটবর্তী মফঃস্বল শহরের ভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি অনেক আগেই।বাবা মারা যাওয়ার আগে সব ভালোই চলছিলো।আমি পড়াশোনাতে ব্যাস্ত থাকতাম সেই সময়টাই।কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর আমি যখন তার আমার জন্য রেখে যাওয়া সম্পদের পরিমাণ দেখলাম তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো!আমার কঞ্জুষ বাবা তার এক মাত্র ছেলের জন্য এমন সম্পদ জমা করেছিলেন যে আমার চৌদ্দ পুরুষ তা খেয়ে শেষ করতে পারবে না!তিনি মারা যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এই ব্যাপারটা আমাকে বুঝতে দেননি যে তিনি এতো ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন!

যাই হোক বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ দেখে আমার মাথা প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম।আমি সারাদিন বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতাম দু হাতে টাকা উড়াতাম!লজ্জার ব্যাপার কিন্তু আপনাকে বলতে চাই যে, সেই সময় স্যার আমার একটা বদ নেশা হয়ে যায় সেটা ছিল নারীর নেশা!প্রতি রাতে আমার কোন না কোন নারীর সাথে রাত না কাটালে আমার রাতই যেন শেষ হতনা!আমার মা বাবার আগেই মারা গিয়েছিলেন আর বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে আমাকে বাধা দেয়ার কেউ ছিলনা!আমি আর আমার কিছু কাছের বন্ধু মিলে টাকার জোরে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি আমাদের গ্রামের!কেউ আমাকে কিছু বলতে পারতো না যেহেতু আমার ছিল প্রচুর টাকা তাই ছোট গ্রামটা আমাদের দাপটে কাঁপতো সব সময়!সব কিছু ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু এক বর্ষায় আমাদের গ্রামে এক বেদেনীর দল আসে নৌকায় করে!তারা বছরে এই সময়টা আমাদের গ্রামে আসতো সব সময়।এরা আসার কিছুদিন পর আমার এক বন্ধু আমায় খবর দিলো যে,বেদেনীদের দলে অপূর্ব সুন্দরী এবং অল্পবয়সী এক বেদেনী মেয়ে এসেছে!আমার মাথায় রক্ত চাড়া দিয়ে উঠলো সেই কথা শুনে!সেদিনই বন্ধুদের নিয়ে নদীর পাড়ে গেলাম সেই মেয়েকে দেখতে!দেখে স্যার আমার মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম কি অপূর্ব সুন্দরী ছিল সেই মেয়ে দারিদ্রতা তার রূপে একটুও প্রভাব ফেলতে পারেনি!আমি বেদেদের সর্দারের সাথে কথা বললাম এবং বললাম এই মেয়েকে একবার আমি পেলে যত টাকা লাগে আমি দেব!কিন্তু আমি তখনও জানতাম না যে সেই সুন্দরী বেদে সর্দারেরই মেয়ে ছিল!বেদে সর্দার আমার প্রস্তাবে রাজী হলেন না বরং রেগে গিয়ে আমার দিকে সাপ ছুঁড়ে মারতে চাইলেন!

No comments:

Post a Comment